কৃষি ঋণ কি, কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি -বিস্তারিত 2025

কৃষি ঋণ

কৃষি ঋণকে কৃষকের উন্নয়নের হাতিয়ারও বলা হয়ে থাকে। কৃষি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কৃষি হচ্ছে একটি দেশের চালিকা শক্তি। আজ বিশ্বে যে দেশেই উন্নয়নের শীর্ষ পর্যায় আছে, প্রত্যেকেই কৃষির উপর নির্ভর করেই আজকে শীর্ষ উন্নয়নে পৌঁছেছে।

সুতরাং, অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির অবদানকে আমরা ভুলতে কিংবা অস্বীকার করতে পারি না। আসুন আমরা ধাপে ধাপে জানি যে , এই কৃষি ঋণ কি, কাকে বলে , কত প্রকার, উৎস কি, কৃষি ঋণের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে একদম বিস্তারিত।

কৃষি ঋণ কি

কৃষি ঋণ হচ্ছে কৃষকরা তাদের দৈনন্দিক ব্যায় নির্বাহের জন্যে যে ঋণ নিয়ে থাকে , সেটিই মূলত কৃষি ঋণ।
এছাড়াও, কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করার জন্য কোনো ঋণ প্রদানকারী সংস্থা ,আত্মীয় কিংবা পরিচিত কারো থেকে যে ঋণ নেয়, সেটিকে কৃষি ঋণ বলে।

কৃষি ঋণ কত প্রকার ও কি কি

এই ঋণকে ৩ ভাগ করা যায়। যথা: ১. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে, ২. সময়ের ভিত্তিতে ও ৩. জামিনের ভিত্তিতে।
আসুন আমরা ধাপে ধাপে বিস্তারিত জানি যে এই উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কত প্রকার, ও সেগুলা কি কি এবং সময়ের ভিত্তিতে কত প্রকার ও কি কি এবং জামিনের ভিত্তিতে কত প্রকার ও কি কি। এছাড়াও, বাস্তব উদাহরনসহ একদম খুব সহজেই।

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কৃষি ঋণ

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে একে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  • উৎপাদনশীল ঋণ
  • ভোগ্য ঋণ
  • অনুৎপাদনশীল ঋণ

এখন আমরা জানবো এই উৎপাদনশীল ঋণ, অনুৎপাদনশীল ঋণ এবং ভোগ্য ঋণ কি। চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই।

উৎপাদনশীল ঋণ

একজন কৃষক তার কৃষি ফসল উৎপাদনের জন্য অর্থাৎ সার, বীজ,ওষুধ, সেচব্যবস্থা, মজুরি দেয়া ইত্যাদি কাজের জন্য যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে উৎপাদনশীল ঋণ বলে।
এই উৎপাদনশীল ঋণ একজন কৃষককে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

ভোগ্য ঋণ

একজন গরিব কৃষক বা ভূমিহীন বা নিজ জমিহীন কৃষক তাদের এক বছরের ফসল দিয়ে তাদের পুরো একটা বছর এর সকল ব্যয় বহন করতে পারে না , তাদের আরো অর্থের প্রয়োজন পড়ে।

এছাড়াও, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: বন্যা, খরা,ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কারণে তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর এইসব সমস্যা ও চাহিদা পূরণের জন্য তারা যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে ভোগ্য ঋণ বলে।

অনুৎপাদনশীল ঋণ

একজন কৃষক তার পারিবারিক বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য অর্থাৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়েশাদী, মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে অনুৎপাদনশীল ঋণ বলে।

এই ধরণের ঋণগুলো একজন কৃষক তার নিকটস্থ গ্রাম্য মহাজন কিংবা ধনী ব্যাক্তির থেকে উচ্চ সুদের হরে নিয়ে থাকে।

সময়ের ভিত্তিতে কৃষি ঋণ

সময়ের ভিত্তিতেও এটিকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আসুন আমরা সেগুলোও জেনে নিয়ে বিস্তারিতভাবে।

  • স্বল্পকালীন ঋণ
  • মধ্যকালীন ঋণ
  • দীর্ঘকালীন ঋণ

স্বল্পকালীন কৃষি ঋণ

স্বল্পলাকালীন বলতে যে ঋণ ১৫ দিন কিংবা তার কম সময়ের জন্যে নেয়া হয়, তাকে স্বল্পকালীন ঋণ বলে।
সাধারণত একজন কৃষক তার ফসল উৎপাদনের জন্য বীজ কিনতে, কীটনাশক ওষুধ কিনতে, গরু-মহিষের খামার কিনতে এই ঋণ নিয়ে থাকে।

মধ্যকালীন ঋণ

যে ঋণ ১৫ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে, তাকে মধ্যকালীন ঋণ বলে।

এই ধরণের ঋণ একজন কৃষক তাদের আত্মীয়-স্বজন , গ্রাম্য মহাজন ইত্যাদি ব্যক্তিদের থেকে নিয়ে থাকে উচ্চ সুদের হারের চুক্তিতে। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেও নিয়ে থাকে।

দীর্ঘকালীন ঋণ

যে ঋণ দীর্ঘ সময়ের জন্য নেয়া হয়ে থাকে , তাকে দীর্ঘকালীন ঋণ বলে। সাধারণত একজন কৃষক ভারী যন্ত্রপাতি কিনতে এই ধরণের ঋন গ্রহণ করে থাকে। উঠাহরণ: জমি ক্রয়, ট্রাক্টর ক্রয়, নলকূপ বসানো ইত্যাদি।

কখনো কখনো বাণিজ্যিকভাবে এই ঋণ নিয়ে থাকে একজন কৃষক।

জামিনের ভিত্তিতে কৃষি ঋণ

জামিনের ভিত্তিতেও এই ঋণকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:

  • জমি বন্দকী ঋণ
  • ব্যক্তিগত ঋণ
  • ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য অস্থাবর সম্পত্তির অতিরিক্ত ঋণ

জমি বন্দকী ঋণ

অনেক সময় কৃষক তার ক্ষুদ্র জমি বা বাস্তু ভিটা ঋণ গ্রহণের জন্য বন্দক রাখে , তাকে জমি বন্দকী ঋণ বলে।

ব্যক্তিগত ঋণ

এই ধরণের ঋণ একজন কৃষক কিছু ব্যক্তিগত এজেন্সির থেকে নিয়ে থাকে। এমনকি তারা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ভূ-স্বামী ইত্যাদি ব্যক্তিদেড় থেকে নিয়ে থাকে। এইধরনের ঋণ হচ্ছ ব্যক্তিগত ঋণ।

ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য অস্থাবর সম্পত্তির অতিরিক্ত ঋণ

অনেক সময় দেখা যায় একজন কৃষক তার পূর্বের কিছু ঋণের জন্য অতিরিক্ত ঋণের টাকা পরিশোধ করে , তাকে ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য অস্থাবর সম্পত্তির অতিরিক্ত ঋণ বলা হয়।

কৃষি ঋণ নীতিমালা

এই নীতিমালা জানা একজনের কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ। নিম্নে দেয়া হলো:

কৃষি ঋণ পাওয়ার উপায়

এটি পাওয়া জন্য আপনাকে কিছু শর্ত মেনে তারপর এটিকে নিতে হবে। আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে এই ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের বেশ কিছু NGEO সংস্থা আছে যারা এই ঋণ প্রদান করতেছে।

এখন আপনার সুবির্ধাথে আপনি এদের যে কারো থেকে এই ঋণ নিতে পারবেন। যদি উদাহরণ দেয়, তাহলে হয়তো আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন। যেমন: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ রাজশাহী উন্নয়ন কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রুপালি ব্যাংক,পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি ব্যাংকসমূহ।

তবে একেক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার নিয়ম একেকরকম। ঋণ নিতে গেলে আপনাকে অবশ্যই তাদের নিয়ম মেনেই ঋণ গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা ঋণ গ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আমার দেখা মতে যখন কোনো কৃষক এই ঋণ নেয়, তখন তাদের থেকে কিছু তথ্য নেয়া হয়। অনেকে এটাকে অনেক জঠিল ও ভাবে, কেননা এই ঋণ নেয়ার জন্য অনেক কাগজে সাক্ষর করতে হয় , এবং অনেক তাদের মৌখিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এছাড়াও, তারা আবার চেকের মাধ্যমে টাকা দেয় , যদি টাকার পরিমান বেশি হয়ে থাকে।

এই ঋণ গ্রহণের বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও ,অনেক অসুবিধাও রয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে সব বিস্তারিত জন্য।

উপসংহার

আশা করি আপনি আপনার সকল প্রশ্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমি আমার সাদ্ধমত আপনাকে এটার সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। যদি আপনার মনে এর পরেও কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

যতটা ভালো ততটাই এর খারাপ দিক ও রয়েছে। প্রতিটা জিনিসেরই ভালো ও খারাপ ২ টা দিক এই থাকে, এমনি এটার ভালো ও মন্দ দিক আছে। আমরা পরবর্তীতে এর ভালোদিক ও খারাপদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

FAQ

প্রশ্ন: কৃষি ঋণ কাকে বলে
উত্তর: একজন কৃষক তার নিত্যদিনের প্রয়োজনে কিংবা কোনো ফসল উৎপাদনে জন্য যে ঋণ গ্রহণ করে থাকে, তাকে কৃষি ঋণ বলে।

প্রশ্ন: কৃষি ঋণ কত প্রকার
উত্তর: কৃষি ঋণ প্ৰধানত ৩ প্রকার।

প্রশ্ন: কৃষি ঋণ সাধারণত কয় ধরনের
উত্তর: এটি ৩ ধরণের। কিন্তু এটিকে আবার কয়েকভাগে ভাগ করেছে তাই সব মিলিয়ে ৯ প্রকার।

প্রশ্ন: কৃষি ঋণ বলতে কি বুঝায়
উত্তর:সহজ কথায়, কৃষক তার প্রয়োজনে যে ঋণ গ্রহণ করে সেটিকেই মূলত কৃষি ঋণ বোঝায়।

শেয়ার করুন
Moshiur Rahman

I am Moshiur Rahman, an enthusiastic writer on agricultural information and research. I strive to deliver reliable and easy-to-understand information on modern agricultural technology, crop production, agricultural loans, and agricultural development, so that farmers and all those involved in agriculture can benefit.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top