আপনি যদি পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আপনার জন্য। এই আর্টিকেল এর মধ্যে পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম সম্পর্কে একদম বিস্তারিত জানতে পারবেন।
একবিংশ (২১’শ) শতাব্দীতে এসে আমরা ভুলেই গেয়েছি আমাদের প্রাচীন কৃষি উপরকণ। যেগুলা একসময় ছিল কৃষি উৎপাদনের একমাত্র কৃষি যন্ত্রপাতি। বর্তমানে আমরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত এবং এইগুলোই কৃষি ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করতেছি।
কৃষি যন্ত্রপাতি বলতেই আমরা চিনে থাকি যে, ট্র্যাক্টর, পাওয়ার ট্রিলার, থ্রেসার, স্প্রেরার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি। কিন্তু আমাদের কৃষি উৎপাদন করতে পূর্বে বেশ কিছু পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো।
চলুন আমরা সেই পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জেনে নেই। তার আগে আপনাকে জানায় দেই যে , আজকে আপনি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে কি কি জানতে পারবেন! আজকে আপনি জানতে পারবেন পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম সম্পর্কে একদম বিস্তারিত। তো চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম
বাংলাদেশের কৃষি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরণের কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষি প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও, ঐতিহ্যবাহী পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো আজও গ্রামাঞ্চলে অনেকতাই ব্যবহৃত হচ্ছে।
বেশ কিছু পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি রয়েছে, আসুন জেনে নিন সেগুলোর নামসমূহ ;
i.ফাঁস, ii.মাটির কুড়াল, iii.বীজ বপন যন্ত্র, iv.ধান কাটার কাঁচি, v.খড় কাটার কচি বা যন্ত্র, vi.ধান মাড়াই করার যন্ত্র, vii.কল বা নলকূপ, viii.মরিচ গাছে পানি দেয়ার যন্ত্র, ix.ধান ঝাড়াই করার যন্ত্র, x.চাল ভাংয়ার যন্ত্র, xi.ফাল, xii.শাল, xiii.সারের ঝুঁড়ি, ixx.আঁশ কাটার হাতিয়ার, xx.ধান ঝাড়াইয়ের জন্য মাঠ, xxi.ধান কুড়ানোর যন্ত্র, xxii.আঁশ ভেজানোর হাও, xxiii.চাল বাটা, ixxx.তেলের ঘানি ইত্যাদি।
কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নাম
এক নজরে দেখে নিন পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নামসমূহ ও তাদের ব্যবহার ;
- ফাঁস – লাঙ্গলের সঙ্গে জোতা বাঁধতে ব্যবহৃত দড়ি বা কাঠামো।
- মাটির কুড়াল – মাটি খোঁড়ার হাতিয়ার।
- বীজ বপন যন্ত্র – বীজ ছিটানো বা গর্তে ফেলার কাজে।
- ধান কাটার কাঁচি – ধান কেটে নেওয়ার ছোট হাতিয়ার।
- খড় কাটার কচি/যন্ত্র – খড় ছোট ছোট টুকরো করার জন্য।
- ধান মাড়াই করার যন্ত্র – ধান থেকে চাল আলাদা করার হাতিয়ার।
- কল/নলকূপ – সেচের পানি তোলার যন্ত্র।
- মরিচ গাছে পানি দেওয়ার যন্ত্র – হাত দিয়ে পানি ঢালার ঝাঁঝরি জাতীয়।
- ধান ঝাড়াই করার যন্ত্র – খড় থেকে ধান আলাদা করার জন্য।
- চাল ভাঙার যন্ত্র – ধান থেকে চাল তৈরি করার জন্য ঢেঁকি বা অনুরূপ যন্ত্র।
- ফাল – লাঙলের ধাতব অংশ।
- শাল – কৃষি কাজে ব্যবহৃত কাঠ বা হাতিয়ার।
- সারের ঝুঁড়ি – সার বহনের জন্য ব্যবহৃত ঝুঁড়ি।
- আঁশ কাটার হাতিয়ার – পাট বা অন্যান্য আঁশ কাটার যন্ত্র।
- ধান ঝাড়াইয়ের মাঠ – ধান মাড়াই বা ঝাড়াই করার জন্য সমান করা খোলা জায়গা।
- ধান কুড়ানোর যন্ত্র – মাটিতে পড়ে থাকা ধান কুড়ানোর জন্য।
- আঁশ ভেজানোর হাও – পাট ভিজিয়ে রাখার জন্য খাল বা পুকুর অংশ।
- চাল বাটা – চাল গুঁড়া করার পেষণ যন্ত্র।
- তেলের ঘানি – সরিষা বা তিল থেকে তেল বের করার জন্য।
আরও পড়ুনঃ ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি -ওজন বৃদ্ধির চার্ট,বাচ্চা উৎপাদন,ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

পাঁচটি পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম
পাঁচটি পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম হলো –
- লাঙ্গল
- ঢেঁকি
- ধান কাটার কাঁচি
- খড় কাটার কচি
- তেলের ঘানি
i. লাঙ্গল : জমি চাষ করার জন্য এটি ব্যবহার করা হতো।এটিকে গরু বা মহিষ দিয়ে টেনে চালানো হতো। এর উপাদান ছিল কাঠ ও লোহার ফাল।
ii. ঢেঁকি : ধান ভেঙে চাল বানানো বা চাল বাটার কাজে এটিকে ব্যবহার করা হতো। ঢেঁকি উপাদান ছিল : কাঠ দিয়ে তৈরি একটি বড় হাতল ও ভারী অংশ।
iii. ধান কাটার কাঁচি : ধান গাছ কেটে ফসল ঘরে তোলার জন্য এই কাঁচি ব্যবহার করা হতো। এটার উপাদান ছিল : লোহা বা স্টিলের ধারালো ব্লেড।
iv. খড় কাটার কচি : খড়কে ছোট-ছোট টুকরো করে গরু-মহিষকে খাওয়ানোর জন্য এটিকে ব্যবহার করা হতো। উপাদান ছিল : ধারালো লোহার ব্লেড কাঠ বা লোহার ফ্রেমে লাগানো।
v. তেলের ঘানি : সরিষা, তিল ইত্যাদি বীজ ভেঙে তেল বের করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এটার উপাদান ছিল : কাঠের পাত্র, লোহার চাক এবং বলদ দিয়ে ঘোরানোর ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি
বাংলার কৃষক সমাজ শুধু জমি চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করত না, তারা গড়ে তুলেছিল এক অনন্য সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি। লাঙ্গল, ঢেঁকি, ধান কাটার কাঁচি, খড় কাটার কচি কিংবা তেলের ঘানি এসব যন্ত্র শুধু ফসল উৎপাদনের হাতিয়ার ছিল না বরং এগুলো ছিল পরিশ্রম, ধৈর্য আর মাটির গন্ধে ভরা কৃষিজীবনের অনন্য প্রতীক।
👉 এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে কৃষকেরা ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তুলতেন সোনার ফসল।
👉 বাঁশ, কাঠ, লোহা কিংবা পাটের তৈরি এসব সরল হাতিয়ারেই যুগের পর যুগ ধরে চলত চাষাবাদ।
👉 গ্রামের মাঠে লাঙ্গলের রেখা, আঙিনায় ঢেঁকির ধ্বনি কিংবা ঘানির ঘূর্ণনে তেলের সুগন্ধ—এসব দৃশ্য আজও আমাদের নস্টালজিয়ার ভাণ্ডারকে নাড়া দেয়।
আজকের আধুনিক যন্ত্রপাতি যদিও কৃষিকাজকে করেছে সহজ ও দ্রুত, তবুও পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি আমাদের ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ। এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
কৃষি শুধু পেশা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস আর শেকড়ের অংশ।
উপসংহার
আপনার মনের আকাঙ্খা জানি না কতটুকু পূরণ করতে পারছি, তবে আপনার যদি এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে বিনা সংকোচে নিচে কমেন্ট করে জানান কিংবা আমাদেরকে মেইল করুন। আর ভালো লাগলে অবস্যই আমাদের সাথেই থাকুন।
FAQ
প্রশ্নঃ পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ প্রাচীনকালে কৃষকরা যে সরল ও হাতের তৈরি যন্ত্র ব্যবহার করে জমি চাষ, ফসল কাটা, মাড়াই, ধান ভাঙা বা তেল বের করতেন, সেগুলোই পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি।
প্রশ্নঃ পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি কোন কোন উপাদান দিয়ে তৈরি হতো?
উত্তরঃ প্রধানত বাঁশ, কাঠ, লোহা, দড়ি, পাট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো।
প্রশ্নঃ কিছু পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির উদাহরণ কী?
উত্তরঃ লাঙ্গল, ঢেঁকি, ধান কাটার কাঁচি, খড় কাটার কচি, তেলের ঘানি ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কীভাবে হতো?
উত্তরঃ এগুলো মানুষ বা গরু-মহিষের শক্তি দিয়ে চালানো হতো। যেমন: লাঙ্গল গরু দিয়ে টেনে চালানো, ঢেঁকি পা দিয়ে চাপ দিয়ে চালানো।
প্রশ্নঃ আধুনিক কৃষি যন্ত্রের সাথে পার্থক্য কোথায়?
উত্তরঃ আধুনিক যন্ত্র চালাতে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহৃত হয় এবং কাজ দ্রুত হয়। কিন্তু পুরাতন যন্ত্রপাতি চালাতে কেবল শারীরিক শক্তি লাগত এবং সময়সাপেক্ষ ছিল।
প্রশ্নঃ আজকের দিনে এসব যন্ত্রপাতি কোথায় দেখা যায়?
উত্তরঃ অনেক গ্রামে এখনও সীমিতভাবে ব্যবহার হয়, তবে বেশিরভাগ যন্ত্র এখন ঐতিহ্য হিসেবে জাদুঘর, প্রদর্শনী বা লোকসংগীতে দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ টিএসপি সারের কাজ কি, টিএসপি সারের দাম এবং সারের ব্যবহার
I am Moshiur Rahman, an enthusiastic writer on agricultural information and research. I strive to deliver reliable and easy-to-understand information on modern agricultural technology, crop production, agricultural loans, and agricultural development, so that farmers and all those involved in agriculture can benefit.