বর্তমানে ২০২৫ সালে এসেও আমরা এই ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি খুবই ব্যাপক হরে দেখতে পাচ্ছি। এটি হঠাৎ ব্রয়লার মুরগি পালন বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এখানে লাভ বেশি এবং পুঁজি কম হলেও শুরু করা যায়। আর এখানে সময়ও কম লাগে।
তো আসুন আজকে আমি জানবো ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একদম খুঁটি নাটি- বিস্তারিত। বিস্তারিত তথ্য হিসেবে থাকছে –ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ, চিত্র, খাচায় ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি,মাচায় ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি, ৫০০ ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি।
এছাড়াও আরো জানতে পারবো ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি,ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা,ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট,ব্রয়লার মুরগির জাত,ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা একদম শূন্য থেকে সবকিছু ধাপে ধাপে জানি।

ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি
প্রথমেই আমরা একটা বিষয় ক্লিয়ার হয়ে নেই যে এই ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগি লিটার,খাঁচা এবং মাচা পদ্ধতিতেও পালন করা যায়। তাই এই ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগি পালনের জন্যে আপনার খুব বেশি জায়গা-জমি থাকতে হবে এমনটা নয়। কিন্তু অবশই আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্যে প্রতি পিছ বাচ্চাকে জায়গা দিতে হবে ৪৫ সে.মি. বা ৭ বাঃ ইঞ্চি এবং বড় মুরগিকে জায়গা দিতে হবে ১ বর্গ মিটার।
এই ব্রয়লার মুরগি পালনের পূর্বে আপনাকে আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হয়ে নিতে হবে যে, আপনি এটিকে বাণিজ্যিকভাবে বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্রয়লার মুরগি পালন করবেন নাকিশুধু পারিবারিক ও টুকটাক অর্থ উপার্জনের জন্যে এটি পালন করবেন!
যদি আপনি বাণিজ্যিকভাবে বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্রয়লার মুরগি পালন করেন তাহলে, এই ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগিগুলোকে দৈনিক ২৩ ঘন্টা আলো সরবরাহ করতে হবে। এই আলো যেন দিনের আলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে সেই ব্যবস্থাপনা আপনাকে করতে হবে, যাতে মুরগিগুলা ভালো হয় এবং দিনের আলো ভালোভাবে অনুভব করে।
এছাড়াও পোল্ট্রি–ব্রয়লার মুরগি চাষ করতে হলে আপনাকে আরো কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আসুন তাহলে আমরা সেসব সম্পর্কে জেনে নিই।
ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি a to z
আচ্ছা! এই ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য আপনাকে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে হবে।
- ব্রয়লার মুরগি নির্বাচন
- ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন
- মুরগির জন্য খামার বাড়ি তৈরী করা
- ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝেতে কতটুকু জায়গা দিতে
- খাবার এবং পানির জায়গা কতটুক হবে
- শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রা কতটুক রাখতে হবে
- শীতকালীন পরিচালন ব্যবস্থা
- ব্রয়লার মুরগির বর্তমান বাজার ব্যবস্থা
- ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্য কোনগুলি
- ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে কিছু সতর্কতা
- ব্রয়লার পালনে কিছু সমস্যা ও এই সমস্যার প্রতিকার
আসুন তাহলে আমরা এই বিষয় গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
১. ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন
এই ব্রয়লার মুরগি পালনের ক্ষেত্রে মুরগির জাত নির্বাচনটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের জাত নির্বাচন করতে হবে।
ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগি নির্বাচনঃ
১. আপনাকে গুণগত মানসম্পন্ন ব্রয়লারের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে
২.ব্রয়লার যেন খুব দ্রুত বাড়ে এমন মুরগির জাত সঠিকভাবে বেছে নিতে হবে। কারণ সব মুরগি সমানভাবে ওজন বাড়ে না এবং দ্রুত বড়োও হয় না।
২. মুরগির জন্য খামার তৈরী
ঘরে মুরগি আসার আগেই আপনাকে মুরগির জন্য ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে, ব্লো ল্যাম্প (blow lamp) দিয়ে ফাক-ফোকরগুলিতে পোকা মাকড় যেমন : উকুন, ছোট বড় এটুলি ইত্যাদি না আসতে পারে সেজন্য এইগুলি বন্ধ করে দিতে হবে।
এরপর, মুরগির বাচ্চার জন্য জায়গা গরম ব্যবস্থা এবং মুরগি আনার ৪৮ ঘন্টার আগেই তা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে নিতে হবে। ব্রুডারকে খবরের কাগজ বা পাতলা কিছু দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। এছাড়াও, ঘরের তাপমাত্রা হতে হবে ৩৫০ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫০ ডিগ্রি ফাঃ।
৩. ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝে
বাচ্চাকে কিছু জায়গা দিতে হবে যেমন: ৪৫ বঃ সেমি (৭ বাঃ ইঞ্চি)। মনে রাখবেন কখনোই যেন গুচ্ছের মুরগি আপনি গুদামজাত না করেন।
মুরগির বাচ্চার সংখ্যা বেশি হলে তারা পরস্পরকে কামড়া-কামড়ি করবে। আবার, খাবার এবং পানির জন্য তারা লড়াই করবে এর ফলে বাচ্চাগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে।
৪. খাবার এবং পানির জায়গা
প্রতি বাচ্চার জন্য খাবার জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে. বা ১” ইঞ্চি। বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলতে থাকবে। প্রথমদিকে,খাবারের জায়গা পুরোটাই ভরে দিলে চলবে।
কিন্তু যখন বাচ্চাগুলো একটু বড় হয়ে যাবে, তখন খাবারের জায়গা অর্ধেক ভর্তি করতে হবে। কারণ, এভাবে চললে খাবার কম নষ্ট হবে। আর আপনাকে দিনে ৪ বার খাবারের দিতে হবে।
আর আপনি যদি খাবারের জায়গা বার বার ভরে দেন, তাহলে মুরগি দ্রুত বেড়ে উঠবে। ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা হতে হবে ৫ সেমি. এবং পরে বেড়ে সেটা দাড়াবে ৭.৫ সেমি বা ৩ ইঞ্চি।
প্রতিদিনই বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পানির জায়গা বেশি সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখবেন,দেশি মুরগির বাচ্চার থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি খায়। বিশেষ করে গরমকালে, গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুুর পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
৫. ঘরের তাপমাত্রা
ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য বাচ্চার ঝাঁক আনবার পূর্বেই অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগেই আপনাকে ঘরটি পরীক্ষা করতে হবে। প্রথম সপ্তাহে শাবক ঘরের তাপমাত্রা হতে হবে ৩৫০ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫০ ডিগ্রি ফাঃ। শাবক ঘরের তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ডিগ্রি ফাঃ বা ২.৮০ ডিগ্র সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। তবে এটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার ওপর।
৬. শীতকালীন পরিচালন ব্যবস্থা
মুরগির বাচ্চার বিছানা ৫ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত গভীর হতে হবে। তবে বিছানার উপরে নতুন একটা বিচুলি বা খড়ের আস্তরণ দিয়ে দেওয়া ভালো এতে বাচ্চাগুলো ঠান্ডা খাবে না। আর সপ্তাহে একবার বার কাটা-কোদাল দিয়ে বিছানা ঘেটে দেওয়া ভালো। এছাড়াও, বিছানার জলীয় ভাব বেশি হলে তখন চুন দিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।
৭. ব্রয়লার মুরগির বাজার ব্যবস্থা
ব্রয়লার মুরগি পালনের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা সেটা হচ্ছে যে এই মুরগির বাচ্চা ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয়। তাই, বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত ঘটনা।
হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল ইত্যাদি শৃঙ্খল নিয়মে ব্রয়লার বড় মুরগি বেশি নিয়ে থাকে। যদি এলাকায় খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তাহলে খুব জোর ৫০ থেকে ১০০ টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব হবে। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার ব্যবস্থা আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও মুরগি বিক্রি করা যেতে পারে।
৮. ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্য
পাউডার বা ধুলোর মত গুড়ি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত এই ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে ঔষধ খাওয়ানো হয়।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে যে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং সর্বশেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% পর্যন্ত। অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে ।
আরও পড়ুন : কৃষি ঋণের উৎস গুলো কি কি-প্রাতিষ্ঠানিক,অপ্রাতিষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক
ব্রয়লার মুরগির জাত
এই ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য আপনাকে এর জাতগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। বেশ কয়েক প্রকার ব্রয়লার মুরগির জাত রয়েছে। নিচে উলেখ করা হলো :
- সেভার স্টার ব্রো – Sever Star Bro
- ভেনকব- Vencob
- হাবার্ড হাইইল্ড -Hubbard High Yield
- সেভার মিনি ব্রো -Sever Mini Bro
- এভিয়ান -Avian
- কব্ ১০০- Cob 100
- সেভারট্রাপিক ব্রো-Severtropic Bro
- হাবার্ড ক্লাসিক- Hubbard Classic
- কব্ ৫০০ -Cob 500
- ইসা- ডেভেট ই-৭৫৭ -ISA- Davett E-757
- সি এন্ড এম ক্লাসিক – C&M Classic
- হাইসেক্স-জি -Hisex-G
- ইসা-এমপিকে-৩০- ISA-MPK-30
- হাবার্ড হাই ওয়াই- Hubbard High Wy
- রস-৩০৮ – Ross-308
- আরবার একরস- Arbor Acres
- কাছিলা হাবচিকস্- Kashila Hubchiks
- হারচিক হাইব্রো – Harchik High Bro
- লোমান মিট – Loman Meat
- ইন্ডিয়ান রিভার -Indian River
চলুন এক নজরে আমরা একটা ছকের মাধ্যমে দেখে নেই যে , কোন জাতটি কোন দেশের!
মুরগির জাত | দেশের নাম |
কব্ ৫০০ -Cob 500 | উৎপত্তিস্থল- যুক্তরাষ্ট্র |
হাবার্ড ক্লাসিক- Hubbard Classic | উৎপত্তিস্থল- ফ্রান্স |
ষ্টার ব্রো | উৎপত্তিস্থল- কানাডা |
হাইব্রো পিএন | উৎপত্তিস্থল- নেদারল্যান্ড |
আরবার একর | উৎপত্তিস্থল-যুক্তরাষ্ট্র |
হাইব্রো পিজি | উৎপত্তিস্থল- ফ্রান্স |
ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ
ব্রয়লার মুরগি পালন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই এর খরচ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। আমরা ব্রয়লার মুরগি পালনের এই খরচ হিসাব করার জন্য সর্ব প্রথম ৫০০ টি মুরগির বাচ্চার জন্য হিসেবে শুরু করি। চলুন তাহলে একটা ছকের মাধ্যমে খুব সহজেই দেখে নেই আমরা।
খরচের ধরন | ইউনিট/হার | পরিমাণ | মোট খরচ (টাকা) |
---|---|---|---|
১. বাচ্চা (DOC) | ৫০ টাকা | ৫০০ টি | ২৫,০০০ /- |
২. খাবার (Feed) | ৩.৫ কেজি × ৪৫ টাকা/কেজি | ১,৭৫০ কেজি | ৭৮,৭৫০ /- |
৩. ভ্যাকসিন ও ওষুধ | গড় | – | ৩,৫০০ /- |
৪. বিদ্যুৎ ও পানি | মাসিক খরচ | – | ২,০০০ /- |
৫. শ্রমিক/পরিচর্যা | ১ জন × ৪০ দিন | – | ৬,০০০ /- |
৬. গরম/ঠান্ডা ব্যবস্থাপনা (হিটার, ফ্যান ইত্যাদি) | আনুমানিক | – | ২,৫০০ /- |
৭. খামার ভাড়া / অবচয় | ৪০ দিন হিসাব | – | ৫,০০০ /- |
৮. অন্যান্য খরচ | আনুষঙ্গিক | – | ২,০০০ /- |
মোট খরচ | – | – | ১,২৪,৭৫০ /- |
আশা করি যে , আপনি ৫০০ ব্রয়লার মুরগি পালন এর বিষয়ে একটা খরচের আনুমানিক ধারণা পেয়ে গেছেন। এখন আপনি চাইলে আপনার প্রয়োজন বা অধিক বাচ্চা আপনি উৎপাদন করতে পারবন।
চলুন ছোট করে আপনার এই ৫০০ ব্রয়লার মুরগি পালন এর ক্ষেত্রে লাভ ও আয়ের হিসেবেটা করে ফেলি।
আয় হিসাব :
বিক্রয় মূল্য: গড় ওজন ২.২ কেজি × ৫০০ টি = ১,১০০ কেজি।
বাজারদর ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা/কেজি = ১,৮৭,০০০ টাকা।
লাভের হিসাব :
বিবরণ | টাকা |
---|---|
মোট আয় | ১,৮৭,০০০ /- |
মোট খরচ | ১,২৪,৭৫০ /- |
নিট লাভ | ৬২,২৫০ /- |
ব্রয়লার মুরগি পালন চিত্র
আসুন ব্রয়লার মুরগি পালনের কিছু বাস্তব চিত্র দেখে নেই আমরা। যে চিত্রগুলো দেখলে আপনার মনের জোর একদম বেড়ে যাবে।

Next-2 :

ব্রয়লার মুরগি পালনের নিয়ম
এখন চলুন তাহলে এই ব্রয়লার মুরগি পালনের নিয়ম সম্পর্কে আমরা একটা বিস্তারিত ধারণা নেই যে , কোনটা কতটুক করবো ,না করবো ইত্যাদি সম্পর্কে।
১. খামার তৈরি ও পরিবেশ ব্যবস্থা
- স্থান নির্বাচন: উঁচু অর্থাৎ পানি জমে না এমন জায়গা বেছে নিন। শহরের ভিড় থেকে একটু দূরে রাখুন।
- খামারের ধরণ: খোলা শেড (Open house) বা আধা-বদ্ধ (Semi-closed) পদ্ধতি ভালো।
- বায়ু চলাচল: পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন, তবে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি বাচ্চার উপর যেন না লাগে।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
- বাচ্চা (প্রথম সপ্তাহ): ৩২–৩৫°C
- ধীরে ধীরে ৪র্থ সপ্তাহে তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে ২৪–২৬°C তে।
- আলো: প্রথম ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা আলো দিন, তারপর দিনে ১৬–১৮ ঘণ্টা আলো রাখলেই যথেষ্ট।
- শুষ্কতা: খামার সবসময় শুকনো রাখতে হবে, আর্দ্রতা ৬০–৭০% এর মধ্যে রাখুন।
২. বাচ্চা (DOC) আনা ও প্রাথমিক যত্ন
- ভালো মানের বাচ্চা কিনুন:
- চোখ উজ্জ্বল, পালক চকচকে, সক্রিয় এবং দাগমুক্ত হতে হবে।
- বড় হ্যাচারি বা বিশ্বস্ত সাপ্লায়ারের কাছ থেকে কিনুন।
- পরিবহন সেবা :
- গরম বা ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত করে আনুন।
- খামারে আনার পরই উষ্ণ পরিবেশে ছাড়ুন।
- প্রথম ২ ঘণ্টা:
- পরিষ্কার, হালকা গরম পানি + গ্লুকোজ দিন।
- প্রথম খাবার (Starter Feed) ২ ঘণ্টা পর দিন।
৩. খাবার ও পানির নিয়ম
- ফিড খাওয়ানোর ধরণ :
- শুরুর দিকে : ১–১৪ দিন
- বৃদ্ধি হওয়া শুরু হলে : ১৫–২৫ দিন
- উপযুক্ত মুরগি হলে : ২৬ দিন থেকে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত
- পরিমাণ:
- প্রতিটি ব্রয়লার গড়ে ৩.২–৩.৫ কেজি খাবার খায় পুরো চক্রে।
- পানি:
- সবসময় পরিষ্কার ও ঠান্ডা পানি রাখতে হবে।
- পানিতে নিয়মিত ভিটামিন, ইলেক্ট্রোলাইট ও ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিন।
৪. ভ্যাকসিন ও রোগ প্রতিরোধ
- প্রধান ভ্যাকসিন সূচি (বাংলাদেশে প্রচলিত):
- ১ম দিন: মারেকস (Hatchery তে দেওয়া থাকে)
- ৫–৭ দিন: নিউক্যাসল (B1)
- ১৪ দিন: গামবোরো
- ২১ দিন: নিউক্যাসল (Lasota)
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
- প্রতিদিন লিটার নেড়ে শুকনো রাখুন।
- অসুস্থ মুরগি আলাদা করুন।
- প্রবেশপথে জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন
৫. তাপমাত্রা ও আলো ব্যবস্থাপনা
বয়স (দিন) | তাপমাত্রা (°C) | আলোর সময় |
---|---|---|
০–৭ | ৩২–৩৫ | ২৪ ঘণ্টা |
৮–১৪ | ৩০–৩২ | ২২ ঘণ্টা |
১৫–২১ | ২৮–৩০ | ২০ ঘণ্টা |
২২–৩৫ | ২৪–২৬ | ১৬–১৮ ঘণ্টা |
৬. বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ
- প্রতিসপ্তাহে মুরগির ওজন মাপুন।
- বাজারে বিক্রির আগে গড় ওজন ২–২.৫ কেজি হওয়া ভালো।
- মৃত্যু হার ৫% এর নিচে রাখতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি
আচ্ছা! আমরা এতক্ষণে অনেক কিছু জানলাম, এখন আমরা আরো জানবো ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে। তাহলে চলুন, বেশি বক বক না করে মূল আলোচনায় আসি।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন এর ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ও জানতে হবে। আসুন আগে সেটা জেনে নেই, তারপর বাকি আলোচনাও শুরু করে দেই। দয়া করে বিরক্ত হবেন না, আমি আশাবাদী যে এই আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার মনের সকল প্রশ্নের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবেন।
- প্যারেন্ট স্টক নির্বাচন
- ব্রিডার ফার্ম ম্যানেজমেন্ট
- ডিম সংগ্রহ ও হ্যান্ডলিং
- ইনকিউবেশন প্রক্রিয়া
- বাচ্চা ফোটানো ও হ্যান্ডলিং
- বায়োসিকিউরিটি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য আপনাকে ভালো জাতের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে, এরপর ধাপে ধাপে আপনাকে সেগুলো বড়ো করতে হবে। আচ্ছা! এই বাচ্চা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমানে Ross 308, Cobb 500, Hubbard ইত্যাদি ব্রিড বেশি জনপ্রিয় আছে , আপনি এদের থেকে কোনো একটি বাছাই করে নিবেন।
এরপর আমরা পরের ধাপের আলোচনা শুরু করি।
বাচ্চা বেছে নেয়ার পর আপনাকে বাচ্চার সুস্থতা, ওজন, এবং এটির প্রজননক্ষমতা যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যে বাচ্চা নির্বাচন করলেন সেটি যেন সুস্থ হয়, ওজন যেন ঠিকমতো থাকে এবং এই বাচ্চা বড়ো হলে যেন এটি অধিক বাচ্চার জম্ম দিতে পারে বা বেশি বেশি ডিম পড়তে পারে।
এরপর আপনাকে ব্রিডার ফার্ম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, আপনার ফার্ম বা ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের ঘরের মধ্যে যেন সঠিক পরিমানে আলো-বাতাস আসে, এরপর ঘরের তাপমাত্রা (২১–২৪°C) ঠিক রাখতে হবে, বাচ্চার জন্য সুষম খাদ্য দিতে হবে,পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন এবং বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিদিন আপনাকে ঘরের মধ্যে ১৪–১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এটি আপনার মুরগির প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকা প্রদান এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রজনন শুরু হলে ডিম সংগ্রহ এবং হ্যান্ডলিং ধাপে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার ডিম সংগ্রহ করা উচিত এবং ফাটা, বিকৃত বা অস্বাভাবিক আকারের ডিম বাদ দিতে হবে। সংগ্রহ করা ডিম পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে এবং ইনকিউবেটরে দেওয়ার আগে ১৬–১৮°C তাপমাত্রায় এই ডিমগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। ডিমের গুণগতমান সরাসরি বাচ্চার স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতার সাথে সম্পর্কিত, তাই এই ধাপে কখনো অবহেলা করবেন না।
এরপর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ — ইনকিউবেশন প্রক্রিয়া। ইনকিউবেটরে প্রথম ১৮ দিন ডিমের মধ্যে ৩৭.৫°C তাপমাত্রা দিতে হবে এবং ৫৫–৬০% আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়। এই সময় প্রতি ২–৩ ঘণ্টা পর পর ডিম ঘোরানো অপরিহার্য। ১৯–২১ দিনের হ্যাচার পর্যায়ে তাপমাত্রা কমিয়ে ৩৬.৫–৩৭°C এবং আর্দ্রতা বাড়িয়ে ৬৫–৭০% রাখতে হয়। ইনকিউবেটরের ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভ্রূণ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
প্রায় ২১তম দিনে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে। বাচ্চা ফোটার পর প্রথম ৮–১০ ঘণ্টা ইনকিউবেটরের ভেতর রেখে বাচ্চাগুলোকে শুকাতে হবে এবং অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ বাচ্চাগুলোকে আলাদা করে দিতে হবে।
এরপর সুস্থ বাচ্চাগুলোকে ব্রুডিং হাউসে স্থানান্তর করতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৩২–৩৪°C রাখা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক দিন বাচ্চাদের জন্য সঠিক তাপমাত্রা ও আলোর মধ্যে রাখতে হবে, কারণ এই সময়েই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বৃদ্ধির গতি নির্ধারিত হয়।
পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বাইরের মানুষ ও যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, যন্ত্রপাতি ও পানির উৎস জীবাণুমুক্ত করা, এবং নিয়মিত Marek’s, Newcastle, ও Gumboro রোগের টিকা প্রদান করতে হবে। যেকোনো সংক্রমণ হলে তা দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ রোগ ছড়িয়ে পড়লে পুরো ফার্মের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা
এখন আমরা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে নিয়ে জানতে যাচ্ছি , তাই এটিকে কখনো অবহেলা করবেন না। খুব গুরুত্বের সাথে মনোযোগ সহকারে পড়বেন। ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা নিম্নে একদম সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়া হলো:
দিনের তালিকা | ওষুধের নম ও উদ্দেশ্য | ব্যবহারের নিয়ম |
---|---|---|
১ম দিন | গ্লুকোজ + ভিটামিন C (স্ট্রেস কমানো) | পানিতে মিশিয়ে ৮-১২ ঘণ্টা |
২-৩ দিন | অ্যান্টিবায়োটিক (E.coli ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ), যেমন: Enrofloxacin / Ciprofloxacin | পানিতে মিশিয়ে দিন |
৪-৫ দিন | ভিটামিন ও ইলেক্ট্রোলাইট (যেমন: Electrolyte Powder) | পানিতে মিশিয়ে দিন |
৬-৭ দিন | অ্যান্টিকক্সিডিয়াল (Coccidiosis প্রতিরোধ), যেমন: Amprolium / Toltrazuril | পানিতে মিশিয়ে দিন |
৮-৯ দিন | মাল্টিভিটামিন + Amino Acid (বৃদ্ধি ত্বরান্বিত) | পানিতে |
১০ম দিন | ND (Newcastle Disease) টিকা – Lasota | পানিতে বা ড্রপ আকারে |
১১-১২ দিন | অ্যান্টিবায়োটিক (CRD প্রতিরোধ), যেমন: Tylosin / Doxycycline | পানিতে |
১৩-১৪ দিন | ভিটামিন ADE + মিনারেলস | পানিতে |
১৫-১৬ দিন | অ্যান্টিকক্সিডিয়াল (২য় ডোজ) | পানিতে |
১৭-১৮ দিন | ভিটামিন B-Complex (পায়ের দুর্বলতা প্রতিরোধ) | পানিতে |
১৯-২০ দিন | অ্যান্টিবায়োটিক (শ্বাসনালী রোগ প্রতিরোধ) | পানিতে |
২১তম দিন | Gumboro টিকা (২য় ডোজ) | পানিতে |
২২-২৩ দিন | মাল্টিভিটামিন + ইলেক্ট্রোলাইট | পানিতে |
২৪-২৫ দিন | অ্যান্টিকক্সিডিয়াল (প্রয়োজন হলে) | পানিতে |
২৬-২৭ দিন | ভিটামিন + অ্যামিনো অ্যাসিড | পানিতে |
২৮-২৯ দিন | হালকা অ্যান্টিবায়োটিক (বাজারের আগে ইমিউন সাপোর্ট) | পানিতে |
৩০তম দিন | পরিষ্কার পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট | পানিতে |
আশা করি যে আপনি ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা পেয়ে গেছেন। অবস্যই এইগুলো মেনে চলবেন বা ফলো করবেন।
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্টটি এক নজরে দেখে নিন। ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ওজন বৃদ্ধির চার্ট দেয়া হলো:
দিন | গড় ওজন (গ্রাম) | দৈনিক ওজন বৃদ্ধি (গ্রাম) |
---|---|---|
১ | 42 | – |
২ | 60 | 18 |
৩ | 80 | 20 |
৪ | 105 | 25 |
৫ | 130 | 25 |
৬ | 160 | 30 |
৭ | 190 | 30 |
৮ | 230 | 40 |
৯ | 270 | 40 |
১০ | 315 | 45 |
১১ | 360 | 45 |
১২ | 410 | 50 |
১৩ | 460 | 50 |
১৪ | 520 | 60 |
১৫ | 580 | 60 |
১৬ | 650 | 70 |
১৭ | 720 | 70 |
১৮ | 800 | 80 |
১৯ | 880 | 80 |
২০ | 960 | 80 |
২১ | 1050 | 90 |
২২ | 1140 | 90 |
২৩ | 1230 | 90 |
২৪ | 1330 | 100 |
২৫ | 1430 | 100 |
২৬ | 1530 | 100 |
২৭ | 1640 | 110 |
২৮ | 1750 | 110 |
২৯ | 1860 | 110 |
৩০ | 1970 | 110 |
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি মূলত একটি জেনেটিক গুণ, খাদ্যের মান, পানির প্রাপ্যতা, তাপমাত্রা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, প্রথম সপ্তাহে ওজন বৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম হলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। ১৪ দিনের পর থেকে দৈনিক ৬০–১১০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন বাড়তে পারে।
এখন খুব সংক্ষিপ্ত করে একটা জিনিস চলুন জেনে নেই।
- প্রথম সপ্তাহ: বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম গড়ে ওঠে, তাই ওজন বাড়ার চেয়ে স্বাস্থ্য ও খাওয়ার সক্ষমতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- দ্বিতীয় সপ্তাহ: ওজন বৃদ্ধির গতি দ্বিগুণ হয়, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য দরকার।
- তৃতীয় সপ্তাহ: ওজন দ্রুত বাড়তে শুরু করে, এখানে ফিড কনভার্সন রেশিও (FCR) ভালো থাকে।
- চতুর্থ সপ্তাহ: বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত হয়, তবে টার্গেট ওজন অনুযায়ী আরও কিছুদিন রাখা যেতে পারে।
ভালো ব্যবস্থাপনায় ৩০ দিনে ব্রয়লার মুরগির ওজন প্রায় ১.৯–২.১ কেজি হতে পারে, যা বাজারে বিক্রির জন্য উপযুক্ত।
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ
আমি জানি আপনি অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছেন ,তাই সংক্ষিপ্ত করে একটা চোখের মাধ্যমে তুলে ধরলাম। আশা করি যে , আপনি এতেই বুঝতে পারবেন। নিম্নে ছকটি দেয়া হলো ;
দিন | ওষুধ / সাপ্লিমেন্টের নাম | উদ্দেশ্য |
---|---|---|
১ম দিন | গ্লুকোজ + ভিটামিন C | পরিবহনজনিত স্ট্রেস কমানো, দ্রুত শক্তি সরবরাহ |
২-৩ দিন | এনরোফ্লক্সাসিন / সিপ্রোফ্লক্সাসিন | ই.কোলাই ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ |
৪র্থ দিন | মাল্টিভিটামিন + ইলেক্ট্রোলাইট | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, পানিশূন্যতা রোধ |
৫-৬ দিন | অ্যামপ্রোলিয়াম / টল্ট্রাজুরিল | কক্সিডিওসিস প্রতিরোধ |
৭ম দিন | অ্যামিনো অ্যাসিড + মিনারেল মিক্স | মাংসপেশি বৃদ্ধি ও হাড় মজবুত করা |
৮-৯ দিন | প্রোবায়োটিকস (প্রোটেক্সিন / বায়োল্যাক) | হজম শক্তি বৃদ্ধি, FCR উন্নত করা |
১০ম দিন | ND (লাসোটা) টিকা | নিউক্যাসল রোগ প্রতিরোধ |
১১-১২ দিন | টাইলোসিন / ডক্সিসাইক্লিন | CRD (Chronic Respiratory Disease) প্রতিরোধ |
১৩তম দিন | ভিটামিন ADE + ক্যালসিয়াম | হাড় বৃদ্ধি, মেটাবলিজম উন্নত করা |
১৪-১৫ দিন | অ্যামপ্রোলিয়াম (২য় ডোজ) | অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা |
১৬তম দিন | লিভার টনিক (লিভল / হেপাটনিক) | লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি |
১৭-১৮ দিন | ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স | পা দুর্বলতা প্রতিরোধ |
১৯তম দিন | প্রোবায়োটিকস + অ্যামিনো অ্যাসিড | হজম ও ওজন বৃদ্ধি |
২০তম দিন | ইলেক্ট্রোলাইট + ভিটামিন C | গরমে স্ট্রেস কমানো |
২১তম দিন | গাম্বোরো টিকা (২য় ডোজ) | গাম্বোরো রোগ প্রতিরোধ |
২২-২৩ দিন | মাল্টিভিটামিন + মিনারেল মিক্স | সার্বিক বৃদ্ধি সহায়তা |
২৪তম দিন | অ্যামপ্রোলিয়াম (প্রয়োজন হলে) | অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখা |
২৫-২৬ দিন | অ্যামিনো অ্যাসিড + প্রোবায়োটিকস | খাদ্য হজম ও পুষ্টি শোষণ উন্নত করা |
২৭তম দিন | লিভার টনিক + মাল্টিভিটামিন | শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখা |
২৮তম দিন | ইলেক্ট্রোলাইট + ভিটামিন C | বাজারের আগে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ |
২৯তম দিন | শুধু পরিষ্কার পানি | অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ রাখা (Withdrawal Period) |
৩০তম দিন | শুধু পরিষ্কার পানি | বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত |
উপসংহার
আশা করি যে আপনি ব্রয়লার মুরগি পালন সম্পর্কে একদম খুঁটি নাটি জানতে পেরেছেন। আমি এখানে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগি পালন নিয়ে একদম বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
বিশেষ করে , একজন মানুষ ব্রয়লার মুরগি পালন সম্পর্কিত যত কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে , সেই দিকে খেয়াল রেখেই এতো তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং উপস্থাপন করেছি। এপর যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানবেন।
FAQ
প্রশ্ন : ব্রয়লার মুরগি কত দিনে বাজারজাত করার উপযোগী হয়?
উত্তর : সাধারণত ব্রয়লার মুরগি ২৮–৩৫ দিনের মধ্যে বাজারজাত করার উপযোগী হয়। তবে, ভালো যত্ন ও সঠিক খাবার দিলে ৩০ দিনেই ১.৮–২.১ কেজি ওজন এর হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : ১০০ ব্রয়লার মুরগি পালনে কত খরচ হয়?
উত্তর : বাংলাদেশে বর্তমান বাজারদরে ১০০টি বাচ্চা পালন করতে প্রায় ২০,০০০–২৫,000 টাকা খরচ হতে পারে, যার মধ্যে বাচ্চা, খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎ এবং শ্রমের খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রশ্ন : ব্রয়লার মুরগির জন্য কী ধরনের খাবার প্রয়োজন?
উত্তর : ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। প্রথমদিকে ১০–১৪ দিন স্টার্টার ফিড, এরপর গ্রোয়ার ফিড, এবং শেষ সপ্তাহে ফিনিশার ফিড প্রয়োজন।
প্রশ্ন : ব্রয়লার মুরগির প্রধান রোগ কী কী?
উত্তর : নিউক্যাসল ডিজিজ (ND), গাম্বোরো, কক্সিডিওসিস, CRD (Chronic Respiratory Disease), এবং E.coli সংক্রমণ প্রধান রোগ। সঠিক টিকা ও বায়োসিকিউরিটি মেনে চললে এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন : ব্রয়লার মুরগির জন্য কত ঘণ্টা আলো দরকার?
উত্তর : প্রথম সপ্তাহে দিনে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আলো দিতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে ১৬–১৮ ঘণ্টায় নামানো যায়।
প্রশ্ন : ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য ঘরের তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?
উত্তর : প্রথম সপ্তাহে ৩২–৩৪°C তাপমাত্রা রাখা উচিত, এরপর ধীরে ধীরে কমিয়ে ২১–২৪°C রাখা ভালো।
আরও পড়ুন : কৃষি ঋণ কি, কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি -বিস্তারিত 2025
I am Moshiur Rahman, an enthusiastic writer on agricultural information and research. I strive to deliver reliable and easy-to-understand information on modern agricultural technology, crop production, agricultural loans, and agricultural development, so that farmers and all those involved in agriculture can benefit.