স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি এখন আমাদের বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক উদ্যোক্তারা এখন স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্ট্রবেরি অত্যন্ত আকর্ষণীয় রঙ, গন্ধ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। স্ট্রবেরিতে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’। এছাড়াও এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। স্ট্রবেরিকে শুধুমাত্র ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাদ্যের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
আপনি যদি স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আপনার জন্য। আজকে আপনি জানতে পারবেন স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একদম খুঁটি-নাটি বিস্তারিত।

স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি চাষ করার পূর্বে আমাদের কিছু জিনিস বা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারপর স্ট্রবেরি চাষ করতে হবে। তাহলে জেনে নেয়া যাক, এই কোন বিষয় বা জিনিস অবস্যই খেয়াল করতে হবে!
- স্ট্রবেরি চাষের পূর্বে স্ট্রবেরির জাত নির্বাচন করতে হবে।
- উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া কোনটি সেটিকেও জানতে হবে
- চাষের জন্য উপর্যুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপণ সম্পর্কে জানতে হবে
- সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ এর বিষয় একদম নিখুঁত তথ্য জানতে হবে
- স্ট্রবেরিতে কখন,কিভাবে,কতটুক সেচ দিতে হবে সেটা জানতেই হবে
- উপযুক্ত ও গুণগতমানের স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন জানতে হবে
- স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে হবে
এছাড়াও জানতে হবে;
স্ট্রবেরির মধ্যে কোন কোন রোগ হয় এবং সেগুলোর প্রতিরোধক কি, আর কিভাবে সেটিকে প্রতিরোধ করতে হবে ! চলুন আমরা ধাপে ধাপে একদম বিস্তারিত জানি।
i. স্ট্রবেরির জাত নির্বাচন
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (Bangladesh Agricultural Research Institute) স্ট্রবেরির একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে যেটির নাম হলো ‘বারি স্ট্রবেরি-১’। স্ট্রবেরির এই জাতটি বাংলাদেশের প্রায় সবখানেই চাষ করা যায়।
এই গাছে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহ করা যায়। বারি স্ট্রবেরি-১ এর প্রতি গাছে গড়ে প্রায় ৩২টি ফল ধরে যার গড় ওজন প্রায় ৪৫০ গ্রাম বা এর কাছাকাছি। তবে, এর হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১২ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
স্ট্রবেরির এই জাতের অর্থাৎ ‘বারি স্ট্রবেরি-১’ এর পাকা ফল অত্যন্ত আকর্ষণীয় টকটকে লাল বর্ণের। ‘বারি স্ট্রবেরি-১’ জাতটি যথেষ্ঠ পরিমানে সরু লতা ও অধিক চারা উৎপাদন করে বলে এর বংশ বিস্তার অনেক সহজ।
এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরো বেশ কয়েকটি স্ট্রবেরির জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যেমনঃ রাবি-১, রাবি-২, রাবি-৩ এবং মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টার, নাটোর থেকে প্রচলিত জাত মডার্ন স্ট্রবেরি-১, মডার্ন স্ট্রবেরি-২, মডার্ন স্ট্রবেরি-৩, মডার্ন স্ট্রবেরি-৪, মডার্ন স্ট্রবেরি-৫। এইগুলো আমাদের দেশে বর্তমানে চাষযোগ্য জাতের মধ্যে রয়েছে।
ii. উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া নির্বাচন
স্ট্রবেরি ফলটি মূলত মৃদু শীত প্রধান অঞ্চলের একটি ফসল। স্ট্রবেরিতে ফুল ও ফল আসার সময় শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ক্ষেত্রে গরমকালের বা গ্রীস্মকালের আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। তবে, যেসব জমিতে পানি জমে এমন উর্বর দোআঁশ থেকে বেলে-দোআঁশ মাটিতে স্ট্রবেরি চাষ করা যাবে না।
iii. উপর্যুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপণ
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী, স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে জমি অন্তত ১ফুট গভীর করে চাষ করতে হবে এবং জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। জমির শেষ চাষের সময় জমিতে সঠিক পরিমানে সার মিশিয়ে দিতে হবে।
স্ট্রবেরি গাছের চারা বাংলার আশ্বিন মাসে অর্থাৎ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর এই সময়ে রোপন করতে হবে। তবে, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়।

তারপর, স্ট্রবেরির চারা রোপণের জন্য জমিতে বেড বানাতে হবে। প্রতিটি বেড প্রায় ৩ ফুট প্রশস্ত করতে হবে এবং দুই বেডের মধ্যে ১ থেকে ১.৫ ফুট চওড়া নালা রাখতেই হবে। প্রতিটি বেডের দুই লাইনের মধ্যেবর্তী দুরুত্ব ১.৫ থেকে ২ ফুট রাখতে হবে। আবার, প্রতিটি লাইনে ১ থেকে ১.৫ ফুট দূরে-দূরে চারা রোপণ করতে হবে। এই হিসেব অনুযায়ী প্রতি শতকে প্রায় ১৫০ টি চারা রোপণ করা যায়।
iv. সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ক্ষেত্রে স্ট্রবেরির ভাল ফলন পাওয়ার জন্য জমিতে পরিমানমতো সার দিতে হবে। তবে, মাটি পরীক্ষা করে সার দিলে ফলন অনেক ভালো হয়। সাধারণত স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতির হিসেব অনুযায়ী প্রতি শতক জমিতে শুকনা পঁচা গোবর সার ১০০-১২০ কেজি, ইউরিয়া সার ১ কেজি, টিএসপি সার ৮০০ গ্রাম, এমওপি সার ৯০০ গ্রাম এবং জিপসাম সার ৬০০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে।
জমির শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, জিপসাম, টিএসপি ও অর্ধেক পরিমাণ এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে খুব ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর, ইউরিয়া ও অবশিষ্ট এমওপি সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১৫-২০ দিন পর-পর ৪ থেকে ৫ টি কিস্তিতে উপর প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ টিএসপি সারের কাজ কি, টিএসপি সারের দাম এবং সারের ব্যবহার
v. সেচ পদ্ধতি
জমিতে পানির অভাব দেখা দিলে প্রয়োজনমতো পানি সেচ দিতে হবে। মনে রাখবেন ; স্ট্রবেরি জলাবদ্ধতা অর্থাৎ অতিরিক্ত পানি জমে থাকা একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি কিংবা সেচের সময় বা পর অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে সেগুলো দ্রুত বের করে দিতে হবে।
vi. স্ট্রবেরির জন্য উপর্যুক্ত ও গুনগতমানের চারা উৎপাদন
স্ট্রবেরি রানারের অর্থাৎ কচুর লতির মতো লতা দেখতে এই মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। তাই পূর্ববর্তী বছরের স্ট্রবেরি গাছগুলোকে নষ্ট না করে পুনরায় জমি থেকে তুলে সেগুলোকে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণ করতে হবে।
এই গাছগুলো থেকে উৎপন্ন রানারের শিকড় বের হলে তা কেটে ৫০ ভাগ গোবর ও ৫০ ভাগ পলিমাটিযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ভরতে হবে বা লাগাতে হবে। এরপর পলিথিন ব্যাগসহ চারাগুলোকে হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
যদি অতিরিক্ত বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে চারাগুলোকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চারার উপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হবে। যদি রানারের মাধ্যমে স্ট্রবেরির বংশ বিস্তার করা হয়, তাহলে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই ভালো জাতের ফলন ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাথার জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা উত্তম।

স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিতে ভালো ফলন পেতে আপনাকে সঠিকভাবে বীজ বপন করতে হবে আসুন জেনে নিই স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি সম্পর্কে।
স্ট্রবেরি বীজ থেকে গাছ তৈরি করতে অবশ্যই ধৈর্য ও যত্ন দুটি জিনিস খুবই প্রয়োজন। প্রথমে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করে নিলে তা কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য হালকা, ঝুরঝুরে এবং জৈবসমৃদ্ধ মাটি তৈরি করতে হবে।
এরপর, মাটির সঙ্গে সামান্য বালি, কোকোপিট ও কম্পোস্ট মিশিয়ে নিতে পারেন। এরপর একটি ছিদ্রযুক্ত টব বা ট্রেতে মাটি ভরে তার ওপর বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজের ওপর বেশি মাটি চাপা না দিয়ে খুব হালকা স্তর দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বীজ বপনের পর স্প্রে বোতল দিয়ে পানি ছিটিয়ে মাটি আর্দ্র করে রাখতে হবে, তবে অতিরিক্ত যাতে ভিজে না যায়।
পাত্রটি স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে উজ্জ্বল কিন্তু সরাসরি রোদ নয় এমন জায়গায় রাখতে হবে। সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চারা গজাতে শুরু করে। যখন চারার মধ্যে ৪–৫ টি পাতা গজাবে, তখন আলাদা টবে বা বাগানে প্রতিটি গাছের মাঝে ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রেখে স্থানান্তর করতে হবে।
মনে রাখবেন ; স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি গাছের যত্নের সময় প্রতিদিন অন্তত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সূর্যের আলো দিতে হবে, মাটি সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে এবং মাসে একবার জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। ধীরে ধীরে গাছে ফুল আসতে শুরু করবে এবং সেখান থেকে সবুজ ফল তৈরি হয়ে পরে তা লাল, মিষ্টি ও রসালো স্ট্রবেরিতে পরিণত হবে।
স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরির গাছের পরিচর্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সব কিছু করলেন কিন্তু যদি স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা ঠিক মতো করতে না পারেন তাহলে সব আপনার ব্যার্থতায় পরিণত হবে। তাই, অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে স্ট্রবেরির গাছের পরিচর্যা করতে হবে।
স্ট্রবেরির ফল যাতে পচে নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড খড় বা কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।তবে,যদি আপনি প্রতি লিটার পানির মধ্যে ৩ মিলিলিটার ডার্সবান-২০ ইসি ও ২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন ডিএফ মিশিয়ে ওই দ্রবণে খড় শোধন করে নিতে পারেন, তাহলে উঁই পোকার আক্রমণ থেকে স্ট্রবেরির ফলকে বাঁচাতে পারবেন।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী স্ট্রবেরি চাষ করা জন্য এর জমি সব সময় আগাছামুক্ত বা পরগাছামুক্ত রাখতে হবে। স্ট্রবেরির গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর পরিমানে রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো দিয়ে পুরো জমি ঢেকে যায়। এতে ফলন ভাল হয় না। তাই, এর জন্য রানারসমূহ ১০ থেকে ১৫ দিন পর-পর কেটে ফেলতে হবে।

ছাড়াও আপনাকে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যার জন্য স্ট্রবেরি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখবে হবে। বিশেষ করে ;
- স্ট্রবেরির পাতায় দাগ পড়া রোগ
- ফল পচা রোগ
- মাকরেড় আক্রমণ
- পাখি আক্রমণ
- মাতৃগাছ রক্ষণাবেক্ষণ
- সর্বশেষ গাছ থেকে ফল সংগ্রহ
এখন জেনে নিন এই প্রতিটা বিষয়।
i. স্ট্রবেরির পাতায় দাগ পড়া রোগ : এটি হয় মূলত এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারণে। এই রোগের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন ও ফলের গুণগত মান উভয় কমে যায়। তবে, এই ছত্রাকের আক্রমণের প্রতিকারের জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন-সিকিউর বা রিডোমিল্ড গোল্ড প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ii. ফল পচা রোগ : এই রোগের তীব্র আক্রমণে স্ট্রবেরি ফলের গায়ে জলে ভেজা বাদামী বা কালো রঙের দাগের সৃষ্টি হয়। দাগগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্রবেরি ফলগুলো তখন খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। তাই, স্ট্রবেরির ফলগুলো পরিপক্ক হওয়ার আগেই অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন-নোইন ৫০ ডব্লিউপি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
iii. মাকরেড় আক্রমণ : মাকড়ের তীব্র আক্রমণের ফলে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ও গুণগতমান ক্রমান্বয়ে মারত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। এই মাকড়ের তীব্র আক্রমণে পাতাগুলো তামাটে বর্ণ ধারণ করে ও পুরু হয়ে যায় এবং সেগুলো ধীরে-ধীরে কুচকে বর্ণের হয়ে যায়।
এর ফলে স্ট্রবেরি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এটি প্রতিকারের জন্য ভারটিমেক নামক মাকড়নাশক ওষুধ প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর-পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
iv. পাখি আক্রমণ : স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতির মধ্যে এই বুলবুলি পাখি স্ট্রবেরির সবচেয়ে বড় শত্রু। এই বুলবুলি পাখি স্ট্রবেরির ফল আসার পর সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার আগেই খুব উপদ্রব শুরু করে। এজন্য ফল আসার পর সম্পূর্ণ বেড জাল দিয়ে স্ট্রবেরির পুরো ক্ষেতকে ঢেকে দিতে হবে যাতে বুলবুলি পাখি ফল খেতে না পারে।
v. মাতৃগাছ রক্ষণাবেক্ষণ : মনে রাখবেন এই স্ট্রবেরি গাছগুলো প্রখর সূর্যের আলো বা তাপ ও বেশি বৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। তাই, মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহের পর সুস্থ-সবল গাছ তুলে পলিথিন ছাউনির নিচে সেগুলোকে আবার রোপণ করলে মাতৃগাছকে সূর্যের খরতাপ ও ভারী বৃষ্টির ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তবে, মাতৃগাছ থেকে উৎপাদিত রানারগুলো পরবর্তী সময়ে আবার চারা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
vi. সর্বশেষ গাছ থেকে ফল সংগ্রহ : ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শুরু এই সময়ে রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরি-১ এর ফলগুলো সংগ্রহ শুরু হয় যা পৌষ মাস থেকে ফাল্গূন মাস পর্যন্ত চলে। যখন স্ট্রবেরির ফল পেকে লাল রঙ হয় তখন ফল সংগ্রহ করতে হয়।
স্ট্রবেরির ফল সংরক্ষণকাল খুব কম হওয়ায় ফল সংগ্রহের পরপরই ফলগুলোকে টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে ফলগুলো গাদাগাদি বা একটির সাথে আর একটি একদম লেগে না থাকে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব ফল সংগ্রহের পর সেই ফলগুলোকে বাজারজাত করতে হবে
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশ
বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ এখন একটি সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগ হিসেবে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্ট্রবেরি ঠান্ডা আবহাওয়ার ফল হলেও এর সঠিক জাত নির্বাচন ও যত্ন নিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতেই সফলভাবে স্ট্রবেরি উৎপাদন করা যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিতে, স্ট্রবেরি চাষের জন্য উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযোগ্য জমি সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে, এটি বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। জমি তৈরির সময় ৮ থেকে ১০ টন জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সার নির্ধারিত হারে প্রয়োগ করা হয়।
এরপর, স্ট্রবেরির চারা সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রোপণ করা হয়, কারণ এ সময়ের তাপমাত্রা স্ট্রবেরি গাছের জন্য একদম উপযোগী থাকে। গাছের সারি ও সারির দূরত্ব ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার রাখা হয় যাতে আলো-বাতাস ঠিক-ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে।
চারা রোপণের পর নিয়মিত সেচ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, তবে পানি জমির মধ্যে জমে থাকা যাবে না। আগাছা বা পরজীবীগুলোকে দমন ও মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে মাচা বা মালচ ব্যবহার করা হয়। গাছ বেড়ে ওঠার সময় নিয়মিত সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
এছাড়া গাছে ফুল আসার সময় পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক থাকতে হয়। বাংলাদেশের পরিবেশে মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ প্রাকৃতিকভাবেই পরাগায়ণ সম্পন্ন করে থাকে, যা ফল ধরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এরপর, ফুল ফোটার প্রায় এক মাস পর ফল সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। পাকা ফলের রঙ উজ্জ্বল লালবর্ণের হয় এবং তখনই তা সংগ্রহ করতে হয়।
আবার, প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা ও ভালো জাত ব্যবহার করলে বাণিজ্যিকভাবে প্রতি বিঘা জমি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্ট্রবেরি উৎপাদন করা যায়।
স্ট্রবেরি বীজের দাম
স্ট্রবেরি জাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে এবং এর সাইজ আলাদা হয়। আর দামের ক্ষেত্রেও রয়েছে পার্থক্য। আপনি স্ট্রবেরির বীজগুলো সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন বীজের দোকানে গেলেই কিনতে পারবেন।
সাধারণত স্ট্রবেরির হাইব্রিড জাতের বীজের দাম প্রতি গ্রাম ২০০- ২৫০ /- হয়ে থাকে। কিন্তু, বাকি অন্য সব বীজের ক্ষেত্রে দামের কমবেশি আছে। যেমনঃ
বীজের নাম | পিচ সংখ্যা | দাম |
---|---|---|
সাদা স্ট্রবেরি | ৫০ | ২০০/- |
বারি স্ট্রবেরি | ৩০ | ১৫০/- |
দেশি বীজ | ১ | ১৫০-২০০/- |
উপসংহার
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি আমাদের বাংলাদেশে এখন একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি বিশাল অবদান পালন করতেছে। পরিশেষে, যদি আপনি স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বলে আমি আশাবাদী, কিন্তু যদি আপনার স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবস্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন কিংবা আমাদের মেইল করবেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য।
আর এতক্ষন মনোযোগসহকারে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক-অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমাদের পাশেই থাকুন আর কৃষি সংক্রান্ত সকল প্রকার তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
FAQ
প্রশ্নঃ স্ট্রবেরি চাষের সময় কোনটি ?
উত্তরঃ বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময়ের আবহাওয়া ঠান্ডা ও অনুকূল থাকায় চারা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
প্রশ্নঃ স্ট্রবেরি দাম ২০২৫ কত ?
উত্তরঃ স্ট্রবেরির দাম স্থানভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত মৌসুমে (জানুয়ারি–মার্চ) পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ২০০–৩০০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সঠিক দাম জানতে স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিতে হবে।
প্রশ্নঃ স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ বাংলাদেশে মূলত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি হলো প্রধান ফলনকাল।
প্রশ্নঃ স্ট্রবেরি চারা কোথায় পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ স্ট্রবেরি চারা পাওয়া যায় স্থানীয় নার্সারি, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদিত নার্সারি ও বীজের দোকান থেকে।
প্রশ্নঃ স্ট্রবেরি গাছের দাম কত ?
উত্তরঃ স্ট্রবেরি চারার দাম স্থান ও জাতভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত একটি চারা ২০–৫০ টাকা দামে পাওয়া যায়। উন্নতমানের ও বিদেশি জাতের চারা কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কোন সারের কি কাজ-পটাশ,টিএসপি,ইউরিয়া,বোরন সারের কাজ কি
I am Moshiur Rahman, an enthusiastic writer on agricultural information and research. I strive to deliver reliable and easy-to-understand information on modern agricultural technology, crop production, agricultural loans, and agricultural development, so that farmers and all those involved in agriculture can benefit.